সিমেন্ট

নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে সিমেন্ট। সিমেন্টের মধ্যে কোন কোন উপাদান আছে তা ব্যবহারকারীর জানা খুবই জরুরী। বিভিন্ন ধরনের সিমেন্ট আছে বাজারে। একেক ধরনের সিমেন্ট ব্যবহারে একেক ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সিমেন্ট একটা সংযোগকারী পদার্থ (Binding Material)। কংক্রিট, মর্টার বা মসল্লা, প্লাষ্টার ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে বালি এবং খোয়ার সংযোগ ঘটায় সিমেন্ট। সিমেন্ট ঠিক মত বাছাই করতে পারলে স্থাপনায় দীর্ঘস্থায়ী শক্তির নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। অতএব, ভাল নির্মাণ কাজের জন্য ভাল সিমেন্ট প্রয়োজন।

সিমেন্ট কেনার আগে কি যাচাই বাছাই করা উচিত?

কোন অনুমোদিত বিক্রেতার নিকট থেকে গুনগত মানসম্পন্ন সিমেন্টই কেনা উচিত। হয়ত সেক্ষেত্রে দাম একটু বেশী হবে কিন্তু সাথে সাথে বিশ্বাস, মান এবং সুরক্ষায় আশ্বাস ও পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে মেরামতের জন্য অধিক অর্থ ব্যয় করার চেয়ে বর্তমানেই একটু বেশী অর্থ ব্যয় করা কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়? আমরা বাড়ীর রং, ফিটিংস পছন্দ না হলে বদলাতে পারি কিন্তু মূল স্থাপনায় সিমেন্ট একবার ব্যবহৃত হওয়ার পর আর কখনও বদলানো যাবে না, অতএব সতর্ক থাকুন। সিমেন্ট নির্মাণ কার্যের এক গুরুত্বপূর্ন উপাদান, যা পুরো বাড়ীটিকে ধরে রাখে।

ডিউরেব্ল কংক্রিট এর প্রপার্টিজ
ক্লোরাইড ও সালফেট প্রতিরোধী
স্বল্প পারমিয়েবল
কম পোরোসিটি
স্বল্প পানির চাহিদা
স্বল্প ব্লিডিং ও সেগ্রিগেশন
হাইড্রেশন বিক্রিয়ায় কম তাপ
দীর্ঘমেয়াদী শক্তি বৃদ্ধি

ভাল সিমেন্টের গুণাগুণ:

  • দীর্ঘকালীন শক্তি এবং টেকসই নির্মাণ।
  • মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে অপেক্ষাকৃত কম খরচ।
  • তাপের তারতম্য জনিত কারনে সৃষ্ট ফাটল প্রতিরোধ করে।
  • মাটি, পানি এবং বাতাসে বিদ্যমান ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের আক্রমন প্রতিরোধ করে।
  • লোহাকে মরিচা ধরার হাত থেকে রক্ষা করে।
  • কম সংকুচিত হয়
  • সুন্দর ও সমৃণ ফিনিশিং
  • কংক্রিট মিশ্রনে কম পানির দরকার হয়।
  • পরিবশে বান্ধব।
  • ভমিকম্প প্রতিরোধক ডিজাইনের পক্ষে উপযোগী।
  • ক্ষতিকারক রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রতিরোধী।

সিমেন্টর যাচাই: ধরুন আপনার সিমেন্টের মানের উপর সন্দেহ হচ্ছে, আপনার আশংকা সিমেন্টেটা খারাপ। তখন আপনি কি করবেন? যদি নিশ্চিত হতে চান তাহলে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করে নিন।

একটু সিমেন্ট নিন, সিমেন্টের পরিমাণ ২৫-৩০ শতাংশ পানি মিলিয়ে ৫০ল্প৫০ল্প২০ মিলিমিটার আকারে ব্লক বানান। পরের দিন সকালে সিমেন্ট জমে যাওয়ার পর আঙ্গুল দিয়ে টিপে দিলে ব্লকগুলো যদি না ভাঙ্গে তার মানে ভাল সিমেন্ট।

বাংলাদেশ নিম্নলিখিতচার ধরনের সিমেন্ট পাওয়া যায়

১.সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট

২.হোয়াইট সিমেন্ট

৩.পোর্টল্যান্ড প্রজ্জোলনা বা ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট

৪.ব্লাষ্ট ফার্নেস স্ল্যাগ সিমেন্ট

বাংলাদেশ প্রায় ৯৮% সিমেন্ট তৈরি হয় মধ্যবর্তী পণ্য অর্থাৎ কিংকার থেকে।

কাঁচামাল ক্লিংকার অর্থাৎ প্রথম ধাপ যা তৈরি হয় বাংলাদেশের বাইরে।

ক্লিংকার সিমেন্ট অর্থাৎ দ্বিতীয় ধাপ যা বাংলাদেশে তৈরি হয়।

ক্লিংকারে চুন থাকে প্রায় শতকরা আটষট্টি ভাগ, এছাড়া বালি, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন অনুপাতে থাকে।

ক্লিংকার জিপসামের অনুপাতঃ

সিমেন্ট জিপসাম যোগ করা হয় যাতে সিমেন্ট জমাট বাঁধতে দেরি করে এবং কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। ক্লিংকার অ্যালূমিনা পরিমানে বেশি থাকলে সিমেন্ট দ্রুত জমাট বাঁধে। সিমেন্ট জিপসামের পরিমাণ নির্ভর করে C3A (ট্রাই ক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেট) এবং ক্ষারীয় পদার্থের পরিমানের উপর। সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ক্লিংকার থাকে >=৯৭% এবং জিপসাম =<০৩%। অন্য ধরনের সিমেন্টগুলোতে জিপসামের পরিমাণ =<০৩% হলেও ক্লিংকারের পরিমাণ বিভিন্ন অনুপাতে হয়।

জিপসামের পরিমাণ বেশি হলে সিমেন্টপেষ্টের আয়তন বেড়ে যায় এবং বন্ধনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

সিমেন্টের প্রাথমিক জমাট বাঁধার সময় কমপক্ষে ৪৫ মিনিট।

সিমেন্টের শেষ জমাট বাঁধার সময় সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টা।

বাংলাদেশে সাধারণত যে চার ধরনের সিমেন্ট বেশি ব্যবহৃত হয় সে সব সিমেন্টের উপাদানসমূহ, ষ্ট্রান্ডার্ড নাম্বার এবং ব্যবহার সংক্ষিপ্ততভাবে নিচে বর্ণনা করা হলো:

. সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট

সিমেন্ট ইতিহাসের প্রথম থেকেই এক প্রকার সিমেন্ট তেরি হয়ে আসছে এবং কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই প্রকার সিমেন্টই সমস্ত নির্মাণ কাজে ব্যবহার হতো।

উপাদান

ক্লিংকার >=৯৭% এবং জিপসাম =<০৩%

ষ্ট্যান্ডার্ড

ASTM (আমেরিকান সোসাইট ফর টেষ্টিং এন্ড মেটেরিয়ালস্) : C ১৫০-০২

BDS (বাংলাদেশ ষ্ট্যান্ডার্ড) : ২৩২-১৯৯৩

EN (ইউরোপিয়ান নর্ম) : ১৯৭-১:২০০০ CEMI

ব্যবহার

সবধরনের কাজের জন্য এই সিমেন্ট ব্যবহার করা যায়। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এই ধরনের সিমেন্ট ছিল আমাদের দেশের একমাত্র সিমেন্ট। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও কাজের ধরন অনুযায়ী সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ভারী নির্মাণ কাজে এখন আর সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় না। কারণ এই সিমেন্ট পানির সঙ্গে মিশালে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় যা ভারি নির্মাণ কাজের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মাঝারি আকৃতির নির্মাণ কাজের জন্য এই সিমেন্ট অত্যন্ত উপযোগী।

. পোর্টল্যান্ড প্রজ্জোলনা বা ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট

সিমেন্টের প্রধান উপকরণ হলো ক্লিংকার আর এই ক্লিংকারের প্রধান উপকরণ চুনাপাথর। চুনাপাথর পানির সাথে বিক্রিয়া করে প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে যা ভারি এবং বিশাল আয়তনের নির্মাণ কাজের জন্য ক্ষতিকর। তাপ বেশি উৎপন্ন হলে ঢালাইয়ের পর স্থাপনাতে চুলের মতো সূক্ষ্ম ফাটল দেখা দেয়, যা Hard crack নামে পরিচিত। বর্তমানে এই সমস্যা দূর করার জন্য সিমেন্টে ক্লিংকারে পরিমাণ কমিয়ে তার জায়গায় কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বাই প্রোডাক্ট হিসাবে যে পোড়ানো কয়লা পাওয়া যায় তা ব্যবহার করা হয়। এই পোড়ানো কয়লা ফ্লাই অ্যাশ নামে পরিচিত। ফ্লাই অ্যাশের কণা ক্লিংকারের কণা বিকল্প হিসাবে এই ধরণের সিমেন্ট ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হয় তাই এই সিমেন্টকে পোর্টল্যান্ড প্রজ্জোলনা বা ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট বলে।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য

ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট ঢালাইয়ের সময় খুব কম তাপ উৎপাদন করে, ফলে ঢালাই শক্ত হওয়ার পরে hair crack এর প্রবণতা কমে যায়। এ ছাড়া এই ধরনের সিমেন্ট সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট অপেক্ষা বেশি শক্তি প্রদান করে। তবে এর প্রাথমিক শক্তি অর্জনের হার সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট অপেক্ষা কম থাকে।

উপাদান

ক্লিংকার = ৮৪-৮৬%, ফ্লাই অ্যাশ=১১-১৩% এবং জিপসাম =<০৩%

ষ্ট্যান্ডার্ড

ASTM (আমেরিকান সোসাইট ফর টেষ্টিং এন্ড মেটেরিয়ালস্) : Type IP ৫৯৫-০২

BDS-EN (বাংলাদেশ ষ্ট্যান্ডার্ড-ইউরোপিয়ান নর্ম) : EN১৯৭-১:২০০০ CEMI II / (I-M) ৪২.৫N

ব্যবহার

ভারি কন্সট্রাকশন কাজে যেখানে একসাথে প্রচুর সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা থাকে। লোনা পানির আবহাওয়াতে, মাটির নিচের কাজে, পানির নিচে বা পানির সংস্পর্শে থাকে এমন স্থাপনাতে।

উল্লেখ্য যে যুক্তরাষ্ট্রে হেবিটি উঅগ যা বিশ্বের বৃহত্তম উঅগ এই প্রকার সিমেন্টের তৈরি।

. ব্লাষ্ট ফার্মেস স্লাগ সিমেন্ট

বর্তমান সময়ে সিমেন্ট ক্লিংকারের অনুপাত কমিয়ে তার বদলে বিভিন্ন ধরনের সমধর্মী উপাদান মেশানো হয়। সেরূপ একটি সমধর্মী উপাদন হলো ‘স্লাগ। ইস্পাত কারখানা থেকে উৎপাদিত এক প্রকার বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে স্লাগ। এই ব্লাষ্ট ফার্নেস স্লাগ সিমেন্ট এবং কার্যকারিতা OPC সিমেন্টের মতই বরং এটি কম তাপ উৎপন্ন করে এবং লবণাক্ত আবহাওয়াতে এই সিমেন্ট সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট থেকে বেশী কার্যকরী। এই সিমেন্ট স্থাপনাকে বাতাসের সালফারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট এর তুলনায় যদিও প্রথম দিকে এর শক্তি অর্জনের হার কম কিন্তু পরবর্তীতে স্লাগ সিমেন্ট OPC সিমেন্ট থেকে প্রায় দেড় গুণ শক্তি বেশি অর্জন করে থাকে।

উপাদান

ক্লিংকার =৭০-৭৫%, ব্লাষ্ট ফার্নেস স্লাগ =২০-২৫% এবং জিপসাম =<০৫%

ষ্ট্যান্ডার্ড

ASTM (আমেরিকান সোসাইট ফর টেষ্টিং এন্ড মেটেরিয়ালস্) : ঈ ৫৯৫-০২

BDS-EN (বাংলাদেশ ষ্ট্যান্ডার্ড-ইউরোপিয়ান নর্ম) : EN১৯৭-১:২০০০ CEM II /ই-গ (ঝ-খ) ৪২.৫ঘ

ব্যবহার

ভারি কন্সট্রাকশন কাজে যেখানে একসাথে প্রচুর সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হবার সম্ভবনা থকে। লোনা পানির আবহাওয়াতে, মাটির নিচের কাজে, পানির নিচে বা পানির সংস্পর্শে থাকে এমন স্থাপনাতে।

. হোয়াইট সিমেন্ট

এ ধরনের সিমেন্ট সিমেন্ট শুধু সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন ফ্লোরের মোজাইকের কাজ বা স্থাপনার বাহিরের দিকের fare face finishing এর জন্য এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। এই সিমেন্টের মূল উপাদান ক্লিংকার কিন্তু এ ক্লিংকার সাধারন ক্লিংকার থেকে অনেক গুণ বেশি পরিশোধিত। ফলে এর দামও সাধারণ সিমেন্টের চেয়ে  থেকে ৪ গুণ বেশি।

ষ্ট্যান্ডার্ড

ASTM (আমেরিকান সোসাইট ফর টেষ্টিং এন্ড মেটেরিয়ালস্) : C ১৫০-৯২

BS (বৃটিশ ষ্ট্যান্ডার্ড) : ১২:১৯৮৯

ব্যবহার

মোজাইকের কাজে ও বাহিরের দেয়ালের কাজে।

নিম্নলিখিতবিষয়গুলির জন্য সিমেন্ট চুন অপেক্ষা অধিক ব্যবহার উপযোগী এবং উৎকৃষ্ট

  • ভিজা এবং পানির নিচে নির্মাণ কাজ তৈরিতে।
  • যেখানে নির্মাণ কাজে স্থায়ীত্ব এবং অধিক শক্তির প্রয়োজন
  • যেখানে মর্টার বা প্লাষ্টার তাড়াতাড়ি জমান বাঁধার দরকার হয়।
  • পানিরোধক নির্মাণ কাজে।

সিমেন্ট পরীক্ষা

  • মিহিত্ব পরীক্ষা।
  • জমাট বাঁধার সময় পরীক্ষা (প্রাথমিক ও শেষ)।
  • সাউন্ডনেস্ পরীক্ষা।
  • রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পরীক্ষা।
  • কমপ্রেসিভ ও টেনসাইল ষ্ট্রেংন্থ পরীক্ষা।

সিমেন্ট মজুদ রাখার নিয়মাবলি

  • শুল্ক বায়ু চলাচল করে এমন জায়গায় সিমেন্ট রাখতে হবে।
  • দেয়ালের ঠেস দিয়ে রাখা যাবে না।
  • পানি সংস্পর্শে আসতে পারে এমন জায়গায় রাখা যাবে না।
  • ব্যাগগুলো ধাপে ধাপে রাখতে হবে।
  • একটি ব্যাগের উপর আরেকটি এভাবে সর্বোচ্চ দশটি ব্যাগ রাখা যাবে।
  • দুই লাইনের মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে।
  • ষ্টোর করার জায়গায় নিচে কাঠের গুড়া (ভুসি) ছিটিয়ে দিয়ে তার উপর কাঠের বাটাম রেখে সিমেন্ট রাখতে হবে।
  • মনে রাখতে হবে পানি সিমেন্টের সবচেয়ে বড় শত্রু। অতএব, সাবধান থাকতে হবে যাতে ঘরের দেয়াল বা মেঝে কিংবা সানশেড দিয়ে পানির ঝাপটা আসতে না পারে।
  • ঠেলা গাড়িতে সিমেন্ট সরবরাহের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে হঠাৎ বৃষ্টি এলেও সিমেন্ট ভিজে না যায়। এজন্য বর্ষাকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও ত্রিপল অথবা পলিথিন দিয়ে সিমেন্ট ঢেকে নিয়ে যেতে হবে।

সিমেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ তার উত্তর

১) গুটি ধরা

২) জমাট বাঁধতে দেরি হওয়া

৩) হাতপা ক্ষয়ে যাওয়া

৪) সিমেন্টের রং

৫) ওজন কম হওয়া

৬)  ব্যাগ ফেটে যাওয়া

৭) মজুদ সংক্রান্ত সমস্যা

নিচে সমস্যাগুলোর ব্যাখ্যা করা হল

প্রথমেই গুটি ধরা সংক্রান্ত সমস্যা সম্বন্ধে কথা বলা যাক। মূলত সিমেন্টের ব্যাগ এয়ার টাইট বা বাতাস অপরিবাহী নয় এবং সিমেন্ট বাতাস থেকেও জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। অতএব যদি সঠিকভাবে সিমেন্ট মজুদ করা না যায় তবে তাতে গুটি ধরতে পারে। সাধারণত দুই ধরনের দানা দেখা যায়। এক ধরনের গুটিকে হাতের আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে ভেঙ্গে যায়। সে ধরনের গুটি তৈরি হয় মূলত চাপের কারণে। এক ব্যাগ সিমেন্টের উপর যদি অনেকগুলো ব্যাগ রাখা হয় তবে কিছুদিন পর নিচের দিকের ব্যাগগুলোতে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে তা সিমেন্টে গুণগত মানের কোন পরিবর্তন করে না।

দ্বিতীয় ধরনের গুটি হাতের চাপে তো ভাঙ্গে না, হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করা হলেও সহজে ভাঙ্গে না। এই ধরনের গুটি তৈরি হয় সিমেন্ট পানির সংস্পর্শে এল। যতই বলা হোক যে সিমেন্ট কোনভাবেই পানি যায়নি তবুও এটা ১০০% নিশ্চিত যে পানি ছাড়া অন্য কোনভাবে এই ধরনের গুটি তৈরি হতে পারেনা। যদি ১ ব্যাগ সিমেন্টের ২০% এর বেশি দানাদার না হয়ে, তবে বাকি ৮০% সিমেন্ট স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করা যাবে। তবে এর চেয়ে বেশি দানাদার মিক্সিং অনুপাত বাড়িয়ে ঢালাই করতে হবে। সাধারণত পেপার ব্যাগের মুখের দিকে পাথর পাওয়া যায় আর পলি ব্যাগে পাওয়া যায় ভিতরের দিকে।

জমাট বাঁধতে দেরি করা

বিভিন্ন কারণে সিমেন্ট জমাট বাঁধতে দেরি করা। যেমন-

  • মিক্সিং এর সময় পানি বেশি দেওয়া
  • শীতল আবহাওয়া
  • বৃষ্টি হওয়া।
  • সিমেন্টের পরিমাণ কম হওয়া
  • বালির গুণগত মান ভাল না হওয়া
  • আগেই কিউরিং শুরু করা
  • অকারণে অথবা অতিরিক্ত অ্যাডমিক্সার ব্যবহার করা।
  • প্লাষ্টার করার আগে ঠিকমত দেয়াল ভিজিয়ে না নেয়া (গ্রাওটিং) না করা।
  • সিলিং প্লাষ্টার করার পূর্বে চিপিং না করা।

সাধারণত সিমেন্ট জমাট বাঁধতে এক থেকে দুইদিন সময় নেয়। তবে সঠিক শক্তি অর্জন করে সাত (৭) দিন পর। অতএব, জমাট বাঁধতে দেরি হলেই ভয় পাওয়া উচিৎ নয়।

হাত পা ক্ষয় হওয়া

সিমেন্টে চুনের উপস্থিতির কারণে হাতপা ক্ষয় হয়।

সিমেন্ট সাধারণত ধূসর বর্ণের হয়। মূলতঃ যে সিমেন্ট যত সাদা সে সিমেন্ট তত ভাল। সিমেন্ট কালো হওয়া মানে এর মধ্যে আয়রনের পরিমাণ বেশি আছে। অথচ অতিরিক্ত আয়রন ঢালাইয়ের ক্ষতি করে। অতএব, সিমেন্ট রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বলতার দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

লাসা না হওয়া

অনেক সময় রাজমিস্ত্রিরা অভিযোগ করেন যে সিমেন্ট লাসা টিকমত হচ্ছে না। তারা বুঝাতে চান যে সিমেন্ট এবং বালি মিশানোর পর পানি দেওয়া হলে ঠিকমত ফেনা হয় না সে কারণে তারা সিমেন্টের গুণগত মান সম্বন্ধে সন্দেহপোষণ করেন, কিন্তু কথাটি আদৌ সত্যি নয়। কারণ সিমেন্টে অতিরিক্ত চুন অথবা ভেজাল থাকলে তা পানির উপরে ভেসে উঠে ফেনা তৈরি করে, যা সত্যিকার অর্থে মসলা বা প্লাষ্টারের জন্য ক্ষতিকর।